• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯

পদ্মা ও মেঘনায়:অভিযানেও বন্ধ নেই ইলিশ ধরা

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ॥
নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশের কড়া অভিযানেও বন্ধ নেই চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনার মোহনায় ইলিশ ধরা। জেলার ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে নদীর তীর এলাকাবর্তী জনপ্রতিনিধি, কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজসে চলে মা ইলিশ নিধন।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ৯ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেঘনা নদীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধন করার অপরাধে ১৬৯ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। এ অভিযানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যেট মো: অলিদুজ্জামান, উত্তর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তারসহ দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ এসব ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রেরিত তথ্যে জানাগেছে, জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স এ পর্যন্ত ১৫৯টি অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ৭৩টি মাছঘাট, মৎস্য আড়ৎ ৪৩২ এবং ৩২১টি বাজার পরিদর্শন করেন। ৩ মেট্টিক টনের অধিক ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। ৩৭ লাখ ৬৮৫ মিটার কারেন্টজাল জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৭ কোটি ৫৩ লাখ ৭ হাজার টাকা। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয় ৫৭টি। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩৬টি। জরিমানা আদায় হয়েছে ১লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং জেলে কারাদন্ড হয়েছে ১৬৯জন জেলের।

জেলার মতলব উত্তরের মোহনপুর, এখলাশপুর ইউনিয়ন, চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কল্যাণপুর, তরপুরচন্ডি, ১০নং লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়ন (সাবেক সাখুয়া ইউনিয়ন), হানারচর, ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন, হাইমচর উপজেলার হাইমচর, উত্তর আলগী ও দক্ষিণ আলগী, গাজীপুর ও নীল কমল ইউনিয়নে প্রতি রাতেই দেদারছে চলছে মা ইলিশ নিধন। এ সব ইউনিয়নের কথিত কিছু জনপ্রতিনিধি, ছাত্রনেতা ও মৎস্য নেতাদের হস্তক্ষেপে মা ইলিশ নিধন হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত করেছে।

এবারের ইলিশের ভরা মৌসুমে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় ইলিশ মাছ না পাওয়ায় এ বছর জেলেরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নদীতে জাল ফেলে ১০ মিনিট রাখলেই প্রতি জালে ৪/৫ মন ইলিশ মাছ ধরা খাচ্ছে। যেখানে ভরা মৌসুমে প্রতি দিন পাওয়া যেতো ২/৩ কেজি মাছ। জেলেদের বেপরোয়া আচরণের কারণে চাঁদপুরে ইলিশ নিধন বন্ধে গত বারের তুলনায় এ বছর আরো বেশী সক্রীয় দেখা যায় প্রশাসনকে। পুলিশ, কোস্ট গার্ড এর পাশা-পাশি নৌ বাহিনীর জাহাজ কুতুবদিয়া মোতায়েন করা হয়েছে। তার পরেও সরিষার ভেতরে থেকেই যাচ্ছে। নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টরদের লোভে ধ্বংস হচ্ছে ইলিশ প্রজনন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মতলব উত্তরের এখলাশপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বরুচর এলাকার জাফর মেম্বার দক্ষিণ বরুচর, চর ওমেথ ও চর কাশিম, জহিরাবাদ চর নিয়ন্ত্রণ করে।

একই উপজেলার ৬নং ওয়ার্ডের বাবুল মেম্বর বাহাদুরপুর, দশানি, মোহনপুর, দশানী, ষাটনল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতি রাতেই তারা নিজস্ব বাহিনী নিয়ে দূর্গম চরাঞ্চলে গিয়ে মাছ শিকার করে ওই চরেই ঝুঁপড়ি ঘর তৈরী করে সেখানে মাছ রাখেন। সূর্যোদয়ের পূর্বে ট্রলার যোগে সেই মাছ মুন্সিগঞ্জ ও এর আশে পাশে কমদামে বিক্রয় করা হয়। দূর্গম চরাঞ্চল ও নদীতে চর থাকায় ওই অঞ্চলে পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর যাতায়াতও কম।
এব্যাপারে বাবুল মেম্বারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, প্রশাসন যদি শক্ত থাকে তাহলে কেউ মাছ ধরার সাহস পাবেনা। আপনার প্রশাসনকে বলুন, জেলেরা কেন নদীতে মাছ ধরে। তাহলে কারা কারা জড়িত জানতে পারবেন।

তিনি বলেন, প্রতি রাতে মুন্সিগঞ্জ থেকে দল বেঁধে জেলেরা এসে আমাদের অঞ্চলে মাছ ধরে। আমরা এর সাথে জড়িত নয়। বরং আমরা মাছ ধরা বন্ধে প্রশাসনকে সহযোগিতা করে থাকি।
তিনি বলেন, আমার ফিসারী ব্যবসা আছে। তা নিয়েই ব্যস্থ থাকতে হয়। এখনতো ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ তাহলে কিসের ব্যবসা করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সাংবাদিক বান্ধব। আপনি আমার সাথে দেখা করেন। চা খাবো আর দুই ভাই মিলে একসাথে কথা বলবো।

এদিকে মোহনপুর পুলিশ ফাঁড়ির ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি জেলেদেরকে মাছ ধরার জন্য সময় দিয়ে থাকেন। নির্দিষ্ট একটি সময় পর তারা অভিযানে নামেন। এর মধ্যেই জেলেরা নদীতে জাল ফেলে আবার জাল তুলে দূর্গম চরাঞ্চলে চলে যায়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মোহনপুর পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মো. নাসিরুদ্দিনের মুঠো ফোনে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
চাঁদপুর সদরের বড় স্টেশন মাছ ধরতে অর্থের বিনিময় জেলেদের সহযোগিতা করেন বড় স্টেশন এলাকার ফার্ণিচার ব্যবসায়ী, সাবেক ছাত্র নেতা আনোয়ার হোসেন, সফিকুল ইসলাম ও মৎস্য ব্যবসায়ী ইকবাল বেপারী। এরা কোড়ালিয়া, টিলাবাড়ী, দোকান ঘর, পুরান বাজার আপনের হাট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

এ বিষয়ে নৌ পুলিশের এসপি মো. জমসের আলী বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ফেলে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • চাঁদপুর সদর এর আরও খবর
error: Content is protected !!