• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

সম্পদের ভাণ্ডার গড়েছেন সর্বকনিষ্ঠ এমপি পলক ও তার স্ত্রী আরিফা

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

অনলাইন ডেস্ক:

দেশের সর্বকনিষ্ঠ এমপি নাটোরের জুনাইদ আহম্মেদ পলক। তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কর্মজীবন শুরু করেন নাটোরের সিংড়া সদরের দমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে। ২০১১ সালের শুরুতে মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে স্থানীয় দমদমা স্কুল অ্যান্ড কলেজে চাকরি নেন। ২০০৮ সালে তার সম্পদ বলতে ছিল সর্বসাকুল্যে ১৫ শতক মাঠের জমি, ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা, নগদ ১০ হাজার টাকা, ১০ ভরি সোনা, ২৫ হাজার টাকা দামের একটি রেফ্রিজারেটর ও ১০ হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল ফোন। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় এখন তিনি ভিশন বিল্ডার্স লিমিটেড কোম্পানির ৮০ ভাগ শেয়ারের মালিক। এখন তার সঞ্চয়পত্র আছে ২০ লাখ টাকার, ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের (ঢাকা-মেট্রো-গ-৩৩-০২৪৫) একটি অত্যাধুনিক প্রাইভেট কার। সোনা ১০৩ ভরি ও নগদ রয়েছে ১০ লাখ ও ব্যাংকে তিন লাখ ৮০ হাজার ৮৭৩ টাকা। একটি ডেস্কটপ ও একটি ল্যাপটপ, এসি ও ফ্রিজ। খাট, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, সোফা, আলমারী ও ওয়্যারড্রবসহ সোনা এবং সব ইলেকট্রনিকস সামগ্রী এই শিক্ষিকা উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে তিনি এগুলোর দাম জানেন না। আগে ১৫ শতক জমির মালিক হলেও এখন তার মালিকানায় রয়েছে ৭৬২ শতক জমি। এর মধ্যে সিংড়া পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে ৩০০ শতক অকৃষি জমিও উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে এর দামও তিনি জানেন না!

আরিফা জেসমিনের স্বামী বর্তমান সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক। ২০০৮ সালে পলকের ব্যাংকে ছিল ২০ হাজার টাকা। নগদ ছিল ৩০ হাজার আর সঞ্চয়পত্র ছিল ১৮ হাজার টাকার। তার নিজের কোনো স্বর্ণ ছিল না। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল ৩০ হাজার টাকার একটি কম্পিউটার, ২০ হাজার টাকার একটি মোবাইল আর ৮০ হাজার টাকার আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল এক বিঘা কৃষি জমি ও ১৮ শতক ভিটা জমি, দুইটি দোকানঘর আর একটি গুদাম। বার্ষিক আয়-ব্যয় উভয়ই ছিল এক লাখ ১৮ হাজার টাকা। চার খালাতো ভাই, দুলাভাই, চাচা ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে দান ও ঋণ নিয়ে নির্বাচনী খরচ চালানো এমপি পলক পাঁচ বছর পরে বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ২৫ লাখ ১১ হাজার ৫২ টাকা বলে তিনি ১০ম সংসদ নির্বাচনে তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। এখন তার ব্যাংকে রয়েছে চার লাখ ৬১ হাজার ৪০৪ টাকা, নগদ দুই লাখ, বন্ড ও সঞ্চয়পত্র আছে ছয় লাখ ৯৯ হাজার টাকার। সাড়ে তিন কোটি টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো অত্যাধুনিক পাজেরো গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৪২৬৯) এমপি হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কিনেছেন মাত্র ৪৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬২২ টাকায়।
এখন তার রয়েছে ৪১ ভরি সোনা, দুইটি ডেস্কটপ, একটি ল্যাপটপ, এসি, ফ্রিজ। জমি কিনেছেন আরও সাত বিঘা ১১ শতক, উপহার পেয়েছেন ৪ শতক, দোকান দু’টি থেকে বেড়ে হয়েছে চারটি, সাথে দোতলা ভবন। স্ত্রীর মতোই তার সোনা, সব ইলেকট্রনিকস সামগ্রী উপহার পাওয়ায় তিনি এগুলোর মূল্য কত জানেন না। তবে শুধু দু’জনের উপহার পাওয়া সোনার বর্তমান বাজার মূল্য ৬১ লাখ টাকা। সব কিছু বাড়লেও এবার তার আসবাবপত্র কমেছে। ২০০৮ সালে ৮০ হাজার টাকার আসবাবপত্র থাকলেও এবার সেটা কমে হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে প্রায় এক কোটি টাকার ১৪৪ ভরি সোনা, পাঁচটি কম্পিউটার, দু’টি এসি, দু’টি ফ্রিজ, তিনটি মোবাইল ও সব আসবাবপত্র উপহার পাওয়ায় এগুলোর মূল্য হলফনামায় লেখা হয়নি। এগুলো বাদেই এবার তিনি অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন এক কোটি ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৮৯৯ টাকার। অথচ ২০০৮ সালে আসবাবপত্র, কম্পিউটার মোবাইলসহ তার অস্থাবর সম্পদ ছিল তিন লাখ ৫৪ হাজার টাকার। আগে টেনশনমুক্ত জীবনযাপন করলেও এখন নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি শর্টগান ও একটি পিস্তল। এসব তথ্যই পাওয়া গেছে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া এমপি পলকের হলফনামা থেকে।

পলকের স্ত্রী আরিফা জেসমিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে সিংড়া দমদমা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক হিসেবে চাকরি নিলেও বছরের বেশির ভাগ সময় স্বামীর সাথে থাকেন ঢাকায়। তার পরিবর্তে মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে ক্লাস নিয়ে দেন স্থানীয় চলনবিল কলেজের প্রভাষক গোলাম রব্বানী। একজন শিক্ষক বাইরে অবস্থান করে অন্যজনকে দিয়ে বছরের পর বছর ক্লাস নেওয়াতে পারেন কি না- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে দমদমা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও সিংড়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেছেন, বর্তমানে প্রভাষক আরিফা জেসমিন ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন।

এ ব্যাপারে দেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের আপন বড় ভাই জুবাইর আহমেদ নয়ন বলেছেন, হলফনামায় তার ছোট ভাই যে সম্পদের বিবরণ দিয়েছেন তা বাস্তবের শত ভাগের এক ভাগও নয়। তিনি বলেন, একই পরিবারের মানুষ হয়েও আমি মাত্র কয়েক হাজার টাকার জন্য আমার চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে পড়ুয়া মেধাবী মেয়ে ঋতি মৃত্তিকা নয়নকে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে না পারায় সে মারা গেছে।

স্ত্রী ছাড়াও মা, চাচা, শ্বশুর, শ্যালক ও তার ফাইভস্টার বাহিনীসহ অনুগত কর্মীদের নামে-বেনামে পলক শত শত বিঘা জমি কিনেছেন ও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন। পলকের বড় ভাই জুবাইর আহমেদ নয়ন সম্প্রতি তার ভাইয়ের টেন্ডারবাজি, ৬৫০টি পুকুর দখল, চাকরি বাণিজ্য, কালো টাকা, হত্যা বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, চাঁদাবাজি কমিশন, খাসজমি বরাদ্দ বাণিজ্যসহ অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং দখলবাজির বিষয়ে নিজের ও নিজের মারা যাওয়া মেয়ে ঋতি মৃত্তিকা নয়নের ছবিসহ ‘খাই খাই রাজনীতি আর কত দিন?’ শিরোনামে নাটোরে ব্যাপকভাবে পোস্টারিংও করেছেন।

এসব বিষয়ে জানার জন্য এমপি পলকের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকা ফোন রিসিভ করে বলেন, এমপি সাহেব নির্বাচনী কাজে বাইরে আছেন। তিনি বলেন, ১৪৪ ভরি সোনা বিভিন্ন সময়ে দলীয় অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে পাওয়া। আর খাট, টিভি ও ফ্রিজের বিষয়টি হলফনামায় ভুলবশত উপহার হিসেবে লেখা হয়েছে।

(তথ্য সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন)

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • সারা দেশ এর আরও খবর
error: Content is protected !!