• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বঙ্গবন্ধুর প্রতি একদল মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

বিশেষ প্রতিবেদক:

আজ থেকে প্রায় ৩২ বছর আগের কথা। দেশে তখন হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসন চলছে। ঐ সময় রাজনৈতিক ডামাডোলে দেশ প্রায়ই উত্তাল থাকতো। তখন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-ভক্তি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ হয়ে উঠে বানিয়ারচর গ্রামে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক বিশেষ কাঙালী ভোজ। আমরা জানি জাতির জনকের জন্মস্থান হিসেবে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া বাংলাদেশের পুন্যভূমি ও স্বাধীনতার সূতিকাগার।

 এই গোপালগঞ্জ জেলারই অন্তর্গত মুকসুদপুর উপজেলার আওতাধীন জলিরপাড় ইউনিয়নের বানিয়ারচর গ্রামের কয়েক জন সাধারণ মানুষ গত তিন দশক ধরে ১৫ আগষ্ট জাতির জনকের শাহাদত বার্ষিকি উপলক্ষ্যে স্থানীয় উদ্যোগে শোক দিবসের অংশ হিসেবে কাঙালী ভোজের আয়োজন করে আসছে। তিন দশক আগে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আজকের মত এতোটা স্বচ্ছল ছিল না। গ্রামের বেশীরভাগ মানুষই তখন অস্বচ্ছল ছিল। অভাব-অনটন ছিল অনেকের নিত্য সঙ্গী। অধিকাংশ মানুষ দিন-মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। সেই অবস্থায় বানিয়ারচরে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এই মানুষগুলোর অধিকাংশই একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত নন। কেউ কেউ হয়তো অনেক কষ্ট করে নিজের নামটা লিখতে পারেন মাত্র।

 উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি কোন কিছু আয়োজনের মূলে থাকে আর্থিক সমর্থন। কিন্তু তিন দশক আগে এই সমর্থন পাওয়াটা ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। তখন কোন পক্ষ থেকেই কোন রকম আর্থিক সহায়তা পাওয়া যেত না। কিন্তু গ্রামে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হবে। গ্রামাঞ্চলে শোক দিবসের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে কাঙালী ভোজের আয়োজন অর্থ্যাৎ আর্থিক সংস্থান এখানে বড় বেশী প্রয়োজন।

 বানিয়ারচর গ্রামের মাঝামাঝি গোপালগঞ্জ-টু-টেকেরহাট সড়কের পাশে রয়েছে ছোট্ট একটি বাজার (বর্তমানে যার নাম নতুন বাজার)। এই বাজার প্রতি বছর ইজারা দেওয়া হয়। প্রথম দিকে এ বাজারটি এতটা সুপরিসর ছিল না। তখন ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই এটি ইজারা দেওয়া হোত। বানিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা তুফান বিশ্বাস নিয়মিতভাবে এই বাজারের ইজারা নিতেন। ইউনিয়ন পরিষদও প্রতি বছর তার জন্য বাজারটি বরাদ্ধ রাখতো; কারণ তখন এর জন্য কোন প্রতিদ্বন্ধিতা ছিল না। এভাবে শুরুর দিকে তিনি একটানা ১৫ বছর এই বাজারের ইজারা নিয়েছিলেন।

 গ্রামের প্রাচীন অনিল মণ্ডলের কাছ থেকে সবিস্তারে জানা যায় যে, তিন দশক আগে যখন বানিয়ারচর গ্রামে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয় তখন তুফান বিশ্বাস তার ইজারাকৃত ঐ বাজারে আদায়কৃত পুরো এক মাসের সমূদয় অর্থ প্রায় ৩০০০/= টাকা তার (অনিল মণ্ডলের) হাতে তুলে দেন। ঐ সময় অনিল মণ্ডল ছিলেন বানিয়ারচর হতে নির্বাচিত সম্মানীত ইউপি সদস্য। শুরু হল জাতীয় শোক দিবস পালনের প্রথম তহবিল গঠন। এভাবে তহবিল ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং বর্তমানে এ তহবিল লক্ষাধিক টাকায় উন্নীত হয়েছে।

 তখন থেকেই প্রতি বছর বানিয়ারচরে ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। এ শোক দিবসে এলাকার হাজার হাজার মানুষ যোগদান করেন এবং কাঙালী-ভোজে অংশ নেন। গত তিন দশক ধরে যে সকল নিবেদিত প্রাণ জাতীয় শোক দিবস পালনের এই ঐতিহ্য নানা বাধাঁ-বিপত্তি অতিক্রম করে অতি সম্মানজনকভাবে ধরে রেখেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন: প্রয়াত প্রগতি হালদার, তুফান বিশ্বাস, অনিল মণ্ডল, প্রয়াত সুরেন বাইন, নীরু মণ্ডল, প্রয়াত বরেন্দ্র নাথ হীরা, অম্বরিশ বারুরী, নিরোদ কির্তনীয়া, মনমথ বৈরাগী, দিপক বাড়ৈ, অধীর সাহা, রকিম বৈরাগী, নিহার হীরা, রবীন বাড়ৈ, বিভুদান বৈরাগী, জোনাস সরদার ও বিনয় কির্তনীয়া সহ বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধি সমীর মণ্ডল, প্রণব হালদার, অংকন বারুরী, প্রদীপ হালদার, প্রেমানন্দ হালদার, হরিশ চন্দ্র বারুরী, দিপঙ্কর মোহন্ত, সঞ্জয় কির্তনীয়া, রাফায়েল মল্লিক, উত্তম কির্তনীয়া, কংকন বালা, অসিত মিস্ত্রী, বাবু বিশ্বাস, ফিলিপ সরকার, শৈলেন মণ্ডল ও মিন্টু কির্তনীয়া সহ আরো অনেকে।

 প্রতি বছর আগষ্ট মাস শুরু হলেই এই মানুষগুলোর ব্যস্ততা যেন অনেক বেড়ে যায়। ২০১৯ সালের জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য প্রথম বারের মত আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এই পরিচালনা কমিটিতে কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশস্বরূপ তুফান বিশ্বাসকে সভাপতি নির্বাচন করা হয় যার বয়স বর্তমানে প্রায় ৯০ বছর। কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন অনিল মণ্ডল এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আছেন প্রদীপ হালদার। এছাড়াও সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন নীরু মণ্ডল, মনমথ বৈরাগী ও রকিম বেরাগী। এবারের জাতীয় শোক দিবস দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে পালন করা হয়েছে যা খুবই সুখকর।।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • সারা দেশ এর আরও খবর
error: Content is protected !!