• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১৭ জুন, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ১৭ জুন, ২০১৯

ইলিশের বাড়ী চাঁদপুরে ইলিশের আকাল, হতাশ জেলেরা

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ॥
রূপালী ইলিশের বাড়ীখ্যাত চাঁদপুরে ইলিশ নেই। ইলিশ না পেয়ে পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেলে খালি হাতে ফিরে আসছে জেলেরা। যা কিছু অল্প পাওয়া যাচ্ছে তার মূল্য আকাশ চুম্বী।

চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকায় ৫১ হাজার ১৯০ নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। বছরের অধিকাংশ সময় নদীতে থেকে মাছ আহরণ করে তারা জীবন জীবীকা নির্বাহ করেন। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার মার্চ-এপ্রিল দু’ মাস ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেন। মা ইলিশ রক্ষায় আবার সেপ্টোম্বরের শেষ ও অক্টোবর মাসের শুরুতে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বাকী সময়ে নদীতে মাছ আহরণে কোন বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু এ বছর মার্চ-এপ্রিল এর নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা ইলিশ না পেয়ে হতাশ। কাঙ্খিত ইলিশ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। তবে অনেকের আশা জুন-জুলাইতে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে পাওয়া যেতে পারে ইলিশ।

সরেজমিন চাঁদপুরের হাইমচর ও সদর উপজেলায় জেলেপাড়াগুলোতে গিয়ে দেখাগেছে অধিকাংশ জেলেই বেকার সময় পার করছেন। কেউ নৌকা মেরামত করছেন, আবার কেউ জাল মেরামত করছেন। নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও মাছ আহণ না করে বেকার সময় কাটাচ্ছেন চা দোকানে অথবা আড্ডা দিয়ে। জাটকা রক্ষা কর্মসূচীর সময় মৌসুমী জেলেরা অধিক পরিমাণে জাটকা ইলিশ নিধন করায় নদী এখন প্রায় মাছ শূন্য। আর যে পরিমাণ পাওয়া যায় তা খরচ উঠানো অসম্ভব।

চাঁদপুর মৎস্যজীবী নেতা তছলিম বেপারী বলেন, ইলিশ আমাদের জেলার ব্র্যান্ডিং পন্য। ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। কিন্তু বিশাল নদী এলাকায় হাজার হাজার জেলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমাদের জেলার জেলেরা নিষিদ্ধ সময় মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকলেও বাহিরের জেলার জেলেরা এসে মাছ আহরণ করে। এছাড়া নদীর পানি দূষণ, চর জেগে উঠা ইত্যাতি কারণে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের বিচরণ কমেছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার এগিয়ে আসলে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বছর জুড়ে রূপালী ইলিশের স্বাদ গ্রহন করা যাবে।

হাইমচরে মাছ ধরতে আসা শরীয়ত পুরের জেলে কাশেম জানান, শরীয়তপুরে পদ্মায় চর পড়ে যাওয়া আমরা ১৪জন জেলে বর্ষার শুরুতে হাইমচরে মাছ ধরতে এসেছি। এখান থেকেই দাদন নিয়েছি। মাছের যে অবস্থা দাদন কিভাবে শোধ করবো তা নিয়েই চিন্তায় আছি।

হাইমচর উপজেলার মোহনপুর এলাকার জেলে মিজানুর রহমান বলেন, সাগর থেকে মেঘনা নদীতে ইলিশ আসার পথে বিভিন্ন বাধার সৃষ্টি হয়। চর জেগে উঠা পানি দুষণের কারণে আমার আগের মত রূপালী ইলিশ পাচ্ছি না। এ কারণে আমাদের উপজেলার অনেক জেলে এখন বেকার রয়েছেন।

সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের জেলে শাহজাহান বলেন, ইলিশ পাওয়ার আশায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঋন নিয়ে নতুন জাল তৈরী করেছি। কিন্তু ইলিশের দেখা মিলছে না। আমরা অন্য পেশায় কাজ করেও অভ্যস্ত নাই। তাই ইলিশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। নদীতে ইলিশের বিচরণ শুরু হলে আহরণে নামবো।

সদরের হানারচর ইউনিয়নের মৎস্য ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান সৈয়াল বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায় ১শ’ জেলে পরিবার রয়েছে। প্রতিদিনই ইলিশ পাওয়ার আশায় নদীতে নামেন। এক নৌকায় কমপক্ষে ৭ থেকে ৯ জন জেলে থাকেন। জ¦ালানি খরচসহ যে পরিমাণ খরচ হয়, তাতে যে ইলিশ পাওয়া যায় তাতে জনপ্রতি ২শ’ টাকা করেও পায় না। বৃষ্টি ও পাহাড়ি পানি নামলে ইলিশের দেখা মিলবে আশা করছি।

হাইমচরের মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় এখন আর আগেরমতো রূপালি ইলিশ পাওয়া যায়না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীর নাব্যতা সংকট, নদীতে চর পড়ার কারণ ইলিশ মাছ সাগর থেকে উপরে আসতে বাঁধা। তবে তিনি বলেন, বর্ষায় নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনায় ইলিশ পাওয়া যাবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, মে ও জুন মাসে ইলিশ একটু কমেই থাকে। কারণ মিঠা পানিতে আসা ছোট ইলিশগুলো এ সময়ে সাগরের দিকে চলে যায়। আবার জুলাই আগষ্ট মাসের দিকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে আসে। আশা করি ওই সময় জেলেরা ইলিশ পাবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর নদী গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুঠো ফোনে বলেন, মে, জুন, জুলাই মাস সাধারণত ইলিশের ঢাল সিজন। এ সময় অল্প-স্বল্প ইলিশ পাওয়া যায়। যদি এবার ইলিশের অভয়াশ্রম ভালো করে রক্ষা করা হতো তাহলে এ সময়েও কিছু ইলিশ পাওয়া যেত।

তিনি বলেন, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর ইলিশের প্রজনন মৌসুম। সেই ৩ মাসেই ব্যাপক পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও যদি বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং নদীর পানি বৃদ্ধি পায় তাহলে এ মৌসুমেও ইলিশ মাছ নদীতে ধরা পড়বে।

এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ২০১৯-২০২০ সালে বাংলাদেশে ইলিশ আহরণের লক্ষমাত্র হলো ৫ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ইলিশ আহরণের লক্ষ মাত্র ছিল ৫ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

error: Content is protected !!