• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০ জুন, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ১০ জুন, ২০১৯

ধারণ ক্ষমতার ৩গুণ যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর ঘাট ছাড়ছে লঞ্চ

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ॥
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ঈদের ৫দিন পরও ধারন ক্ষমতার ৩ গুন যাত্রী নিয়ে লঞ্চ গুলো যাত্রীদের নিরাপত্তার দিক চিন্তা না করে নিজেদের ইচছা মত ওভার লোড করে যাত্রী নিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করছে। এতে করে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাত্রীদের প্রান হানীর সম্বাবনা বিরাজ করছে। চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলোতে উপচেপড়া ভীড় লক্ষ করা গেছে। ধারন ক্ষমতার ৩ গুন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর লঞ্চঘাট ত্যাগ করছে লঞ্চগুলো। এতে যেমন দূর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে, তেমনি দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিশু ও নারী যাত্রীদের। ঈদের পর গতকাল রোববার থেকে যাত্রী বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চ তাদের ৮/৯শ” যাত্রী ধারন ক্ষমতা থাকলেও তারা ৩ গুন যাত্রী অর্থাৎ আড়াই হাজার হতে শুরু করে ৩ হাজার পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাওয়ার জন্য চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল ত্যাগ করছে বলে অভিযোগ করে জানিয়েছেন, চাঁদপুর কোস্টগার্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো: মাইনুল ইসলামসহ কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। এ ছাড়া গতকাল রোববার রাত ১২টা ১৫ মিনিটে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ এমভি ময়ুর-৭ অতিরিক্ত যাত্রীর কারনে রাত ১১টায় ধারন ক্ষমতার ৩ গুন যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর নৌ-টামিনাল ত্যাগ করে।

এদিকে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে কর্মরত নামপ্রকাশ না করা সত্বেও একাধিক লঞ্চ সুভার ভাইজার জানান,সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চ ধারন ক্ষমতার ৩/৪ গুন যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর থেকে ঢাকার দিকে গিয়েছে।

সোমবার দুপুরে সরেজমিন লঞ্চঘাট গিয়ে দেখাগেছে, নির্ধারিত সময়ের আগে লঞ্চগুলোর স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী যাত্রী হলেও ছাড়ছে না। নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় আড়াই হাজার থেকে ৩হাজার যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে লঞ্চগুলো। সকাল থেকে এমভি সোনারতরী, এমভি রফ রফ, এমভি ঈগল,এমভি আবে জমজম, এমভি প্রিন্স অব রাসেল,মেঘনা রানী ও বোগদাদিয়া-৭ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর ঘাট ছেড়েছে। লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি রুহুল আমিন জানান, চাঁদপুর-ঢাকা-চাঁদপুর নৌরুটে ভ্রমন আরামদায়ক হওয়ার কারণে যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে এরুটে ২২টি বিলাসবহুল লঞ্চ যাতায়াত করে। চাঁদপুরজেলাসহ পাশ^বর্তী জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও শরীয়তপুর জেলার আংশকি মানুষ এখন এরুটে যাতায়াত করেন। ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে এখন কর্মমূখী মানুষগুলো নিজ গন্তব্যে ফেরার জন্য লঞ্চেই যাওয়া শুরু করেছেন।

লক্ষ্মীপুর থেকে আসা যাত্রী মোহাম্মদ নিয়াজ জানান, সিডিউল সময়ে ও নিয়মানুযায়ী লঞ্চগুলো আগের তুলনায় অধিক যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে। প্রতি ঘন্টায় লঞ্চ রয়েছে। সে কারণে আমরা ইচ্ছে করেই ভীড়ের মধ্যে লঞ্চে উঠছি না। ঢাকাগামী আরো কয়েকজন যাত্রী বলেছেন, কর্মস্থলে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ঢাকায় যাবেন না। প্রয়োজনে পরবর্তী লঞ্চে যাত্রা করবেন। তারপরেও ঝুঁকি নিবেন না। কারণ সময়ের চাইতে জীবনের মূল্য অনেক বেশী। চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে যাতে কোন লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে না যেতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্র্ক। তবে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ বেড়েছে রোববার থেকে। এ ঘাটের যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, স্কাউট সদস্যসহ আমাদের লোকজন সার্বক্ষনিক কাজ করছেন।

কর্মমূখী মানুষ ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যেন দূর্ঘটনার ঝুঁকিতে না পড়েন সে বিষয়ে লঞ্চ মালিক ও বিআইডাব্লিউটিএর দায়িত্বরতদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

প্রতিটি লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী লঞ্চে না উঠার জন্য বললেও যাত্রীরা তা শুনছে না। বাধ্য হয়ে লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রীর কারনে নির্ধারিত সময়ের ২০-৩০ মিনিট পূর্বে ঘাট ত্যাগ করতে হচ্ছে।
পরিবারের সাথে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন শেষে কর্মমূখী মানুষ তাদের কাজে যোগ দিতে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য শরীয়তপুর জেলার চরাঞ্চল, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী জেলাসহ আশপাশের জেলার লোকজন যাতায়াতের সহজ পথ নৌ-পথ হওয়ায় বেশীরভাগ মানুষই লঞ্চে যাতায়াত করে। এই সুযোগে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছেমত যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিপুর্ণ যাত্রা করে যাচ্ছে।


লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার জানান, যাত্রীদের না উঠার জন্য নিষেধ করলেও তারা জোরপূর্বক লঞ্চে উঠছে। এই কারণে নির্দিষ্ট যাত্রীর চাইতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীর চাপ থাকায় যাত্রী পারা পারের জন্য ২টি ম্পেশাল লঞ্চ দেওয়া হয়েছে।
ঈগল, ময়ুর, বোগদাদীয়া, ইমাম হাসান সহ কয়েকটি লঞ্চের চাঁদপুর ঘাটের দায়িত্বরত মালিক প্রতিনিধি আলী আজগর সরকার জানান, যাত্রীদের লঞ্চে না উঠার জন্য বারণ করলেও তাদেরকে থামিয়ে রাখা যায় না। তারা জোড় করে লঞ্চে উঠে। যার ফলে লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই ঘাট ত্যাগ করছে।
চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্বাভাবিকের চাইতে বেশী যাত্রী যাচ্ছে। ওভারলোডিংও হচ্ছে। সেটি সহনিয় পর্যায়ে রয়েছে। সিডিউল মোতাবেক লঞ্চ না আসায় সিমিত লঞ্চ হওয়ায় আমরা অতিরিক্ত যাত্রী বহনের সুযোগ দিচ্ছি। বর্তমান সময়ে ঈদুল ফিতরের পর অতিরিক্ত যাত্রী বহন অপরাধ হলেও লঞ্চ সিমিত হওয়ায় জরিমানা করা হচ্ছে না।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • চাঁদপুর সদর এর আরও খবর
error: Content is protected !!